আপনি কি কারেন্ট বিল বের করার নিওম সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক? আপনি যদি কারেন্ট বিল বের করার নিওম সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন। কারেন্ট বিল বের করার নিওম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পরুন।
সূচিপত্র ঃ
কারেন্ট বিল অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিল (Electricity Bill) হলো আপনার ব্যবহৃত বিদ্যুতের জন্য নির্ধারিত অর্থমূল্য, যা নির্দিষ্ট সময় পর পর (সাধারণত মাসিক) প্রদান করতে হয়। এই বিলের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণ ও তার মূল্য পরিশোধ করেন।
কারেন্ট বিল অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিলের উপাদানসমূহ
বিদ্যুৎ বিলের হিসাব সাধারণত নিম্নলিখিত উপাদানগুলো নিয়ে করা হয়:
-
এনার্জি বিল (Energy Bill): আপনার ব্যবহৃত মোট বিদ্যুৎ ইউনিট (kWh) × প্রতি ইউনিটের মূল্য।
-
মিটার বিল (Meter Bill):
-
ডিমান্ড চার্জ (Demand Charge): সিঙ্গেল ফেজে প্রতি কিলোওয়াট ১৫ টাকা।
-
সার্ভিস চার্জ (Service Charge): সিঙ্গেল ফেজে ১০ টাকা, থ্রি ফেজে ৩০ টাকা।
-
ভ্যাট (VAT)ঃ নেট বিলের ৫%।
-
জরিমানা (Penalty) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে নেট বিলের ৫% জরিমানা হিসেবে যোগ হয়।
কারেন্ট বিল অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিল হিসাবের উদাহরণ
ধরা যাক, আপনি এক মাসে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। তাহলে:
-
এনার্জি বিলঃ ২০০ ইউনিট × ৭.২০ টাকা = ১,৪৪০ টাকা।
-
মিটার বিলঃ ডিমান্ড চার্জ (১৫ টাকা) + সার্ভিস চার্জ (১০ টাকা) = ২৫ টাকা।
-
ভ্যাটঃ (১,৪৪০ + ২৫) × ৫% = ৭৩.২৫ টাকা।
-
মোট বিলঃ ১,৪৪০ + ২৫ + ৭৩.২৫ = ১,৫৩৮.২৫ টাকা।
কারেন্ট বিল অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়
-
শক্তি সাশ্রয়ী যন্ত্র ব্যবহার করুনঃ এলইডি বাল্ব, ইনভার্টার এসি ইত্যাদি।
-
অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র বন্ধ রাখুনঃ যেমন, টিভি, ফ্যান ইত্যাদি।
-
সৌর শক্তি ব্যবহার করুনঃ সোলার প্যানেল ইনস্টল করে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারেন।
-
নিয়মিত যন্ত্র পরিষ্কার রাখুনঃ যেমন, এসি, ফ্রিজ ইত্যাদি।
অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল কারেন্ট বিল অর্থাৎ চেক ও পরিশোধ
আপনি অনলাইনে আপনার বিদ্যুৎ বিল চেক ও পরিশোধ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ:
কারেন্ট বিল অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিল হিসাবের ধাপসমূহ
১. ইউনিট খরচের স্তর (Slab Rates)
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিলের জন্য বিভিন্ন স্তরের ইউনিট খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
-
০–৫০ ইউনিটঃ প্রতি ইউনিটে ৪.৬৩ টাকা (পল্লী বিদ্যুৎ)
-
০–৭৫ ইউনিটঃ প্রতি ইউনিটে ৫.২৬ টাকা
-
৭৬–২০০ ইউনিট ঃ প্রতি ইউনিটে ৭.২০ টাকা
-
২০১–৩০০ ইউনিটঃ প্রতি ইউনিটে ৭.৫৯ টাকা
-
৩০১–৪০০ ইউনিটঃ প্রতি ইউনিটে ৮.০২ টাকা
-
৪০১–৬০০ ইউনিটঃ প্রতি ইউনিটে ১২.৬৭ টাকা
-
৬০০+ ইউনিটঃ প্রতি ইউনিটে ১৪.৬১ টাকা
২. বিলের উপাদানসমূহ
বিদ্যুৎ বিলের মোট পরিমাণ নির্ধারণের জন্য নিম্নলিখিত উপাদানসমূহ যোগ করা হয়:
-
ইউনিট খরচঃ ব্যবহৃত ইউনিটের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত খরচ
-
ডিমান্ড চার্জঃ নির্দিষ্ট লোডের ভিত্তিতে নির্ধারিত চার্জ
-
সার্ভিস চার্জঃ মাসিক নির্ধারিত চার্জ
-
মিটার ভাড়াঃ মিটার ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত চার্জ
-
ভ্যাট (৫%)ঃ মোট বিলের উপর ৫% ভ্যাট
উদাহরণ হিসাব
ধরা যাক, আপনি ১৯৮ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছেন। এই ক্ষেত্রে, বিল হিসাবের প্রক্রিয়া হবে:
মোট ইউনিট খরচঃ ৩৯৪.৫০ + ৮৮৩.৬০ = ১২৭৮.১০ টাকা
এছাড়া, অন্যান্য চার্জসমূহ যোগ করা হবে:
-
ডিমান্ড চার্জঃ ৪২ টাকা
-
সার্ভিস চার্জঃ ১০ টাকা
-
মিটার ভাড়াঃ ৪০ টাকা
মোট চার্জ: ৪২ + ১০ + ৪০ = ৯২ টাকা
মোট বিল (ভ্যাট ছাড়া): ১২৭৮.১০ + ৯২ = ১৩৭০.১০ টাকা
ভ্যাট (৫%): ১৩৭০.১০ × ৫% = ৬৮.৫০ টাকা
মোট বিল (ভ্যাটসহ): ১৩৭০.১০ + ৬৮.৫০ = ১৪৩৮.৬০ টাকা
অনলাইন ক্যালকুলেটর
আপনি সহজেই অনলাইনে আপনার বিদ্যুৎ বিল হিসাব করতে পারেন। নিচের লিঙ্কে গিয়ে আপনার ইউনিট ও ডিমান্ড লোড অনুযায়ী বিল হিসাব করুন:
বিদ্যুৎ বিল কমানোর টিপস
-
অপ্রয়োজনীয় লাইট ও ফ্যান বন্ধ রাখুন।
-
ইনভার্টার প্রযুক্তির এয়ার কন্ডিশনার ও ফ্রিজ ব্যবহার করুন।
-
একসঙ্গে বড় লোড চালানোর পরিবর্তে সময় ভাগ করে ব্যবহার করুন।
-
সোলার প্যানেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ খরচ কমানোর চেষ্টা করুন ।
যদি আপনার বিদ্যুৎ বিল নিয়ে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে বা নির্দিষ্ট কোনো সহায়তা প্রয়োজন হয়, অনুগ্রহ করে জানান।
এলাকার বিদ্যুৎ বিলের হার
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিলের হার বিভিন্ন গ্রাহক শ্রেণী ও ব্যবহারের পরিমাণ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। নিচে কিছু সাধারণ শ্রেণীভুক্ত বিদ্যুৎ বিলের হার উল্লেখ করা হলো:
আবাসিক (Residential) গ্রাহকদের জন্য
ইউনিট পরিমাণ | প্রতি ইউনিট মূল্য (টাকা) |
---|
০–৭৫ ইউনিট | ৩.৭০ |
৭৬–২০০ ইউনিট | ৩.৮০ |
২০১–৩০০ ইউনিট | ৫.১৪ |
৩০১–৪০০ ইউনিট | ৫.৩৬ |
৪০১–৬০০ ইউনিট | ৫.৬৩ |
৬০০+ ইউনিট | ৯.৯৮
|
বাণিজ্যিক (Commercial) গ্রাহকদের জন্য
সেচ (Agricultural) গ্রাহকদের জন্য
-
প্রতি ইউনিট মূল্যঃ৩.৮২ টাকা
-
ডিমান্ড চার্জঃ প্রযোজ্য নয়
-
মিনিমাম বিলঃ মৌসুমে মাসিক ন্যূনতম বিল প্রতি অশ্বশক্তি ১২৫ টাকা হারে, তবে মৌসুমে ৩০০০ টাকার কম নয়
শিল্প (Industrial) গ্রাহকদের জন্য
-
ক্ষুদ্র শিল্প (জি,পি) ০–২৫ কিলোভোল্ট অ্যাম্পিয়ার পর্যন্ত লোডে প্রতি ইউনিট ৭.৬৬ টাকা
-
বৃহৎ শিল্প (এল,পি): ৭৫০ কেভিএ এর উর্ধ্বে লোডে প্রতি ইউনিট ৭.৫৭ টাকা
এই হারগুলো বিভিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে। আপনার নির্দিষ্ট এলাকার বিদ্যুৎ বিলের হার জানার জন্য স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস বা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করুন।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস
নিয়মিত বিল পরিশোধ করুনঃ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে জরিমানা হতে পারে।
বিদ্যুৎ ব্যবহারের রেকর্ড রাখুনঃ আপনার ব্যবহৃত ইউনিট ও যন্ত্রের তথ্য সংরক্ষণ করুন।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ এটি আপনার বিল কমাতে সাহায্য করবে।
বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধু বিল কমাতে সাহায্য করে না, বরং পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। নিচে কিছু কার্যকর উপায় উল্লেখ করা হলো:
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কার্যকর উপায়
১. এলইডি বাল্ব ব্যবহার করুন
সাধারণ বাল্বের তুলনায় এলইডি বাল্বে ৭৫% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় এবং এগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়।
২. অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র বন্ধ রাখুন
ব্যবহার শেষে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সুইচ বন্ধ করুন। অপ্রয়োজনীয় বাতি বা ফ্যান ব্যবহার করবেন না।
৩. চার্জার প্লাগ খুলে রাখুন
ব্যাটারি চার্জার (যেমন- ল্যাপটপ, সেল ফোন) ব্যবহার শেষে প্লাগ ইন করে না রেখে খুলে রাখুন, কারণ এগুলো শক্তি গ্রহণ করে।
৪. কম্পিউটার স্লিপ মোডে রাখুন
কম্পিউটার ব্যবহারের পর স্লিপ মোডে রাখলে ৪০% পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
৫. ফ্রিজের তাপমাত্রা ঠিক রাখুন
ফ্রিজের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং ফ্রিজারের তাপমাত্রা -১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে রাখুন।
৬. ফ্রিজ ডিফ্রস্টিং করুন
ফ্রিজে অতিরিক্ত বরফ জমলে ঠাণ্ডা করার ক্ষমতা কমে যায়, ফলে বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়। তাই কয়েকদিন পর পর ফ্রিজ ডিফ্রস্টিং করুন।
৭. টিভি দেখার সময় সীমিত করুন
টিভি দেখার জন্য সময় নির্দিষ্ট করে নিন। আধুনিক স্মার্ট টিভিতে সময় সেট করা যায়, সেটি করুন। এতে নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিভি অফ হয়ে যাবে।
অতিরিক্ত টিপস
-
সাদা রঙের ব্যবহার: ঘরের দেয়াল, ছাঁদ, পর্দা এবং আসবাবপত্রে সাদা রঙ ব্যবহার করুন। এতে ঘর উজ্জ্বল দেখায় এবং আলো কম লাগে, ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।
-
প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার: দিনের বেলায় যতটা পারা যায় প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার করুন। এতে বিদ্যুৎ খরচ কমবে।
-
আয়রন ব্যবহারে সতর্কতা: কাপড় আয়রন করার সময় ইস্ত্রির সুইচ অন করে রেখে দেবেন না। কাজ না করলেও এটি বিদ্যুৎ গ্রহণ করে, ফলে বিদ্যুতের অপচয় হয়।
এই সহজ ও কার্যকর উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে পারেন এবং মাস শেষে বিল কমাতে সাহায্য পাবেন। এছাড়া, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায়ও অবদান রাখতে পারবেন।
মনে রাখবেন: বিদ্যুৎ বিলের হার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত এবং পরিবর্তনযোগ্য। সর্বশেষ হার ও নিয়মাবলী জানতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার ওয়েবসাইট বা অফিসিয়াল নোটিশ চেক করুন
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url